আন্তারেস, আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযানে পাঠককে আমন্ত্রণ
দীপেন ভট্টাচার্য ভবিষ্যতে গিয়ে অতীতের দিকে চোখ ফেরান। যা শুধু পড়তেই ভাল লাগে তা নয়, শেখারও থাকে অনেক কিছু। আমার যেহেতু বই ও লাইব্রেরি নিয়ে একধরনের অবসেশন রয়েছে তাই আমি আন্তারেসের লাইব্রেরিতে ঢুঁ মার
ইংরাজি ‘সায়েন্স ফিকশনের' বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে 'কল্পবিজ্ঞান' কথাটা এখন চালু হয়ে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় আমরা সায়েন্স ফিকশন বলতাম। একদিন আমার দাদিমা একটা বই এনে দিলেন, মেরি শেলির ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। সেই আমার প্রথম সায়েন্স ফিকশন পড়া। এমনই মজেছিলাম যে এধরেন বই পাওয়া মাত্রই গোগ্রাসে গিলতাম। আমরা ছোটবেলায় বই পড়তাম না, গিলতাম বলা যেতে পারে। এখন গ্যাস্ট্রিকের কারণে বই গেলা বন্ধ রেখেছি। এখন দেখেশুনে পড়তে ইয়ে মানে গিলতে হয়। সবিনয়ে বলে রাখি, আমি বোদ্ধা কোন পাঠক নই। যা পড়ি, তাই লিখি। সায়েন্স ফিকশন আমার প্রিয় বিষয়। মেরি শেলির পর পড়লাম জুলভের্ন। এরপর এইচ. জি. ওয়েল্স, আজিমভ, জগদীশ চন্দ্র বসু, হেমল দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিত রায়, কাজী আব্দুল হালিম, হুমায়ুন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, লীলা মজুমদার, এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, অদ্রীশ বর্ধন সহ অনেকে। সকলের নাম মনেও নাই। আবার এই স্বল্প পরিসরে লেখাও সম্ভব না। সায়েন্স ফিকশন আসলে কি বস্তু? সায়েন্স ফিকশন মানে এমন এক বিস্ময়মণ্ডিত কাহিনি যার সঙ্গে মিশ্রিত থাকবে বৈজ্ঞানিক তথ্য, তত্ত্ব এবং ঐ সব তত্ত্বের প্রয়োগে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তার কাল্পনিক চিত্র, যা শুধু পড়তেই ভাল লাগবে তা নয়, শিক্ষামূলকও হবে। তো দীপেন ভট্টাচার্যের একটি বই পড়েছিলাম 'দিতার ঘড়ি' এবার পড়লাম 'আন্তারেস'। কাহিনি লেখকের বয়ানে এরকম, আন্তারেস নামে একটা স্পেসশিপকে অনুসরণ করছে গ্যালাক্সির এক বর্বর সভ্যতা আউরেউরগথদের মহাকাশযান। আন্তারেসে রয়েছে বহু কিশোরী ও কিশোর এই অল্পবয়স্ক অভিযাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে অপ্রত্যাশিত সব আবিষ্কার যা আন্তারেসকে নিয়ে যাবে এক নতুন পথে। পড়তে মজাই লাগছে, শুধু একটু দাঁতের ও ঠোঁটের কষ্টটুকু ছাড়া। অগ্নিমিথ্ৰা, আউরেউরগথ, ড্রেগলস নামগুলি উচ্চারণ না করেই আমি এগিয়ে যেতে থাকি। চমৎকৃত হয় যখন দেখি উনি আমাদের বন্ধু বিজনকেও রেখেছেন মহাকাশযানের কর্মী হিসেবে।
আপনিও পড়ুয়া'য় লিখুন। আমাদের কাছে লেখা পাঠাবার ঠিকানা editor@porua.net
দীপেন ভট্টাচার্য ভবিষ্যতে গিয়ে অতীতের দিকে চোখ ফেরান। যা শুধু পড়তেই ভাল লাগে তা নয়, শেখারও থাকে অনেক কিছু। আমার যেহেতু বই ও লাইব্রেরি নিয়ে একধরনের অবসেশন রয়েছে তাই আমি আন্তারেসের লাইব্রেরিতে ঢুঁ মারি। সেই লাইব্রেরি অংশটুকু পাঠকদের সাথে নিয়েই পড়ি;
"...চক্রে পৌঁছানোমাত্র মা আমাকে বলল, ‘ঘরে চলে যা রে, শোগি।' বলে মা আর সিয়েনা আমাদের ফেলে দৌড়ে চলে গেল। এ রকম আগে কখনো হয়নি, বুঝলাম না জেমলার সেই গহ্বরের বরফের উজ্জ্বল প্রতিফলন দেখে তারা কেন এত ঘাবড়ে গেল।
আমি কথাটা বেলককে কখন বলব ভাবছিলাম। বেলক আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বেলককে লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে নিশ্চয়। আসলে লাইব্রেরিটা ছিল বিশাল একটা মিউজিয়াম, মূলত পৃথিবী ও মহাবিশ্বের সব ধরনের তথ্য সেখানে পাওয়া যেত। মহাশূন্যের পোশাক ছেড়েই দৌড়ে গেলাম লাইব্রেরিতে। বইয়ে ঠাসা লাইব্রেরি, মেঝে থেকে অনেক ওপরে তাকের পর তাক সাজানো বই। আসলে ঠিক বই নয়, বলা যায় বইয়ের প্রতিচ্ছবি। পৃথিবীতে প্রাচীন সময়ে নাকি লাইব্রেরিতে এভাবেই বই সাজানো থাকত।
সেই অনুভূতিটা বজায় রাখতে এই জাহাজেও সেভাবে বই রাখা হয়েছে, যদিও সেগুলো আসলে বই নয়, কম্পিউটার দিয়ে গড়া বইয়ের ছবিমাত্র। আমরা যদি কোনো বই পড়তে চাই বা শুধু দেখতে চাই তাহলে সেদিকে হাতের তর্জনী তুললেই বইটা পড়ার টেবিলের ওপর ভেসে উঠবে। লেজারের আলোয় মূর্ত হয়ে উঠবে পুরো বই, আমি আঙুল দিয়ে পাতা সরাতে পারব, পড়তে পারব শূন্যে ভেসে ওঠা অক্ষরগুলো। (আমি তো আইপ্যাডে এমন কিছুই তো করতে পারছি এখন - রিটন)
বেলক লাইব্রেরির এক কোনায় উপুড় হয়ে একটা পাথর দেখছে। আমাকে দেখে বলল, ‘জানো এই জিনিসটা কী? এর নাম হলো রোজেটা স্টোন। এটা দেখে গবেষকেরা প্রথম মিসরীয় ভাষার পাঠোদ্ধার করতে পেরেছিলেন।’
আমি খুব আশ্চর্য হয়ে জিনিসটা দেখলাম, একটা বিশাল পাথরের চাঁই। তাতে নানান ধরনের বর্ণমালায় লেখা। আমার দিকে বেলক তাকিয়ে বলল, ‘জানো এর জন্য কত লোক কত শ্রম করেছে, মিসরীয় ভাষা ছিল ছবিতে লেখা, তাকে হিরোগ্লিফ বলা হতো। তো কেউ সেটা পড়তে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত হঠাৎ করেই একটা জায়গায় এই পাথরটা পাওয়া যায় যেখানে মিসরীয়, গ্রিক ও আমহারিক ভাষায় লেখা আছে।'
‘এটাই কি সেই আসল পাথর?' জিজ্ঞেস করি আমি।
‘হ্যাঁ,’ বলে বেলক।
পৃথিবী ছেড়ে আসার সময় আমাদের অনেক প্রাচীন স্মৃতি দিয়ে দেওয়া হয়। হামুরাব্বির প্রথম আইনফলক, পৃথিবীর দেশসমূহের বিলুপ্তির সনদ। বেলক বলল, ‘এসব সামনাসামনি না দেখলে এগুলোর গভীর তাৎপর্য বোঝা যায় না।'"
প্রছদ সহ ১৪২ পাতার বই পড়তে ঘণ্টা-খানেকের বেশি লাগার কথা নয়। বইটি চমৎকার। আমি পড়ে আরাম পেয়েছি। আন্তারেস বাসিন্দাদের শেষমেশ কি হলো? জানতে হলে পড়তে হবে। আপনাদেরও পড়তে বলছি। প্রকাশ করেছে বাতিঘর। দাম রাখছে ৩২০ টাকা, কিন্তু আমেরিকায় বইটার দাম ১৬ ডলার হবে কোন যুক্তিতে সেটা বোঝা গেলো না। আরেকটা অনুযোগ প্রচ্ছদ একেবারেই ভালো হয় নাই। বরং লেখকের আলোকচিত্রটি বেশি সেক্সি।
সায়েন্স ফিকশন
আন্তারেস
দীপেন ভট্টাচার্য
বাতিঘর ২০২৩
মূল্যঃ ৩২০