বই নিয়ে টিকিটাকা
পৃথিবীর প্রথম বই প্রকাশের ঘটনাটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
আবিষ্কৃত পৃথিবীর প্রথম সাহিত্য
‘গিলগামেশ’কে পৃথিবীর প্রথম সাহিত্যের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৮ শতকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া(বর্তমান ইরাক-সিরিয়া)তে উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল। উপন্যাসটির রচয়িতা কে ছিলেন সেটি অজ্ঞাত থাকলেও ‘গিলগামেশ’ এর বিষয়বস্তু কি ছিল সে তথ্য আজ আর আমাদের অজানা না। উরুকের(এটি বর্তমান ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের একটি স্হান) রাজা গিলগামেশকে ঘিরে উপন্যাসের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। রাজা গিলগামেশ ছিলেন একজন বীরযোদ্ধা। একই সাথে প্রবল প্রজা উৎপীড়ক হিসেবেও তার যথেষ্ট দুর্নাম ছিল। এ ছাড়া নারীর প্রতি তার আসক্তি ছিল ভয়াবহ পর্যায়ের। উরুক এবং তার আশপাশ অঞ্চলের নারীরা তার কারণে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। এক দেবীর ঔরসে জন্ম নেওয়া কুলাঙ্গার রাজা গিলগামেশকে শায়েস্তা করতে দেবতারা তোড়জোড় শুরু করেন। তারা শলাপরামর্শ করে এনকেদু নামে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশুরূপী একজনের জন্ম দেন। যে কিনা গিলগামেশকে শায়েস্তা করবে। প্রথমে গিলগামেশ এবং এনকেদু একে অন্যের সাথে যুদ্ধে অংশ নিলেও কালক্রমে গিলগামেশ এবং এনকেদু, দুজনে পরম বন্ধু হয়ে ওঠে। যাকে বধ করার জন্য এনকেদুর জন্ম, সেই এনকেদুই বন্ধু গিলগামেশের জন্য জীবন পর্যন্ত দেয় শেষমেশ। গিলগামেশ এবং এনকেদুর কাহিনি বিস্তারিতভাবে এই উপন্যাসটিতে বর্ণিত আছে। ১৮৭০ সালে উপন্যাসটির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়, যে কারণে আমরা এর কাহিনি জানতে সক্ষম হয়েছি। পৃথিবীর প্রাচীনতম এই উপন্যাস প্রাচীনতম ভাষা কিউনিফর্মে লিখিত। কাদামাটি ফলকের উপর লিখিত ‘গিলগামেশ’ উপন্যাসের নমুনাটি বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। আধুনিক প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ, কেননা এখন এটির পুরোপাঠ্যটি ডিজিটাইজড করা হয়েছে। চাইলে যে কোন পাঠক পাঠ্যটি ডাউনলোড করে নিজের সংগ্রহে রাখতে পারেন।
প্রথম প্রকাশিত বই:
পৃথিবীর প্রথম বই প্রকাশের ঘটনাটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই ঘটনার সাথে দুটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার জড়িত ছিল; একটি প্রথম ছাপা বই এবং অন্যটি প্রকাশনার জন্য প্রিন্টার আবিষ্কার। জার্মান নাগরিক জোহানেস জেনসফ্লাইশ জুম গুটেনবার্গ (Johannes Gensfleisch zum Gutenberg) এই অসাধ্য সাধন করে পৃথিবীকে চমকে দেন। ছাপাকৃত প্রথম বইটি ছিল বাইবেল, যা ১৪৫৩ এ.ডি. তে প্রকাশিত হয়। যে কারণে এটিকে গুটেনবার্গ বাইবেল নামে অভিহিত করা হয়েছিল।
পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস:
ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে লেখা হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস। এটি লিখেছেন জাপানি লেখক মুরাসাকি শিকিবু( Murasaki Shikibu )। উপন্যাসে জাপানী যুবরাজ হিকারু গেঞ্জি এর সাথে তার প্রেমিকা মুরাসাকি ন উ এর প্রণয় এবং জীবন সংগ্রামের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। যুবরাজ গেঞ্জি, সম্রাট বাবার চোখের মণি হিসেবে আদর যত্নে মানুষ হলেও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার কারণে সম্রাট ছেলেকে ত্যাগ করেন। যুবরাজ গেঞ্জির জীবনে ঘটে যায় বিরাট ছন্দপতন। তারপরও যুবরাজের জীবন থেমে থাকেনি। সময়ে প্রেম, টিকে থাকার সংগ্রাম-সংঘাত ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে সবই ঘটে। সেসব ঘিরেই এই উপন্যাস রচিত হয়। এই উপন্যাস যে সময়ে লেখা হয় তখন জাপানে কল্পকাহিনি লেখার চল ছিল না বললেই চলে। মূল পাঠটি আদি জাপানি ভাষায় রচিত ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি আর বিদ্যমান নেই। মূল পাণ্ডুলিপির সন্ধান না পাওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় উপন্যাসটি অনুদিত হয়। ১৯২৫ সালে আর্থার ওয়েলি ‘দ্য টেল অফ গেঞ্জি’ ইংরেজিতে এটি অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফ সেটির রিভিউ লিখেছিলেন।
কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া:
বিদেশ-বিভূঁইয়ে বাসে-ট্রামে বই পড়ুয়া পাঠকের দেখা পাওয়াটা খুব সাধারণ ঘটনা। হাতে হাতে ফোন ওঠে আসার আগে বেশির ভাগ ভ্রাম্যমান পাঠক কাগজের বই বহন করলেও এখন সেই ছবি অনেকটাই বদলে গেছে। এখন বাসে-ট্রামের পড়ুয়া পাঠক ফোন আইপ্যাড ইত্যাদি ডিভাইসেই তাদের পড়ার কাজটা করে আরাম পান। বই বহনের বাড়তি ঝামেলাহীন এই পঠন-পাঠন। এইসব ভ্রাম্যমাণ পাঠকদের দেখে আমাদের মনে এমন প্রশ্ন জাগা খুব স্বাভাবিক- আচ্ছা কোন দেশের লোকজন সবচেয়ে বেশি বই পড়ে থাকেন? কি মনে হয়, কোন দেশ হতে পারে? উত্তরটা বেশিভাগ উত্তরদাতাকে হয়ত হতাশ করবে। ইউরোপের উত্তরে নর্ডিক অঞ্চলের ছোট্ট দেশ আইসল্যান্ড। এই দ্বীপ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো। আশ্চর্যের কথা, ছোট্ট এই দেশটির মানুষ গড়ে সবচেয়ে বেশি বই পড়ে থাকেন।