'চতুরঙ্গ' : কিছু নেপথ্য কথা
‘চতুরঙ্গ’-এর প্রথম সংখ্যা (আশ্বিন ১৩৪৫) বের হয় ১৯৩৮ খ্ৰীষ্টাব্দের শেষ দিকে—অক্টোবর মাসে। তবে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বছরের প্রথম দিকেই। শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ (১৯০৫-১৯৮৮) তাঁর ডায়েরীতে লিখেছেন—
বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ত্রৈমাসিক ‘চতুরঙ্গ’ অবিস্মরণীয় নাম। ‘...বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যচর্চার কাহিনী কেউ যদি বিবৃত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন স্পর্ধার সঙ্গেই বলতে পারি ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকাকে এড়িয়ে যাওয়ার জো থাকবে না তাঁর।’১ সাহিত্যিক গবেষক সৈয়দ মুর্তজা আলী (১৯০৩- ১৯৮১) মনে করেন, ‘এই পত্রিকার স্থান সবুজপত্রের পরেই নির্দিষ্ট করা যায়।’২ আর অন্নদাশঙ্কর রায় (জ. ১৯০৪) জানিয়েছেন ‘একজন গুজরাটির মুখেও শুনেছি ‘চতুরঙ্গ’ই আদর্শ।’৩
শুরুতেই উদ্ধৃতির আধিক্য দেখা গেল। ‘চতুরঙ্গ’-এর পরিচিতির জন্য এটা অপরিহার্য ছিল না। তবে এটিই বর্তমান আলোচনার বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক। অবশ্য এরপর আমরা যেসব উদ্ধৃতি আহরণ করবো তার বেশীরভাগ উৎসই হবে চিঠিপত্র, সাক্ষাৎকার, ডায়েরী জাতীয় রচনা ইত্যাদি নথি। প্রাণান্তকরভাবে প্রমাণিক হওয়ার চেষ্টা একারণেই যে পত্রিকাটির প্রকাশনার প্রথম পর্ব নিয়ে নানাবিধ কথাবার্তা উঠে। একথা ঠিক কোনো বক্তব্য স্থাপন বা খণ্ডন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নই। আজ যখন ঐ ঐতিহাসিক উদ্যোগের প্রধান তিন কলাকুশলী হুমায়ুন কবির (১৯০৬-১৯৬৯), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪), আতাউর রহমান (১৯১৯-১৯৭৭) কেউই জীবিত নন তখন একটু ভেতরের কথা আলোচনা নির্দোষ কৌতূহলের ব্যাপার মাত্র। এ থেকে কিছু জিজ্ঞাসার জবাব মিললে কিংবা নতুন প্রশ্ন প্রবিষ্ট হলেও বোধকরি অলাভজনক হবে না।
‘চতুরঙ্গ’-এর প্রথম সংখ্যা (আশ্বিন ১৩৪৫) বের হয় ১৯৩৮ খ্ৰীষ্টাব্দের শেষ দিকে—অক্টোবর মাসে। তবে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বছরের প্রথম দিকেই। শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ (১৯০৫-১৯৮৮) তাঁর ডায়েরীতে লিখেছেন—
বিষ্ণু [বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২)] সঙ্গে ট্রামে হিরণ- এর হীরণকুমার সান্যাল (১৮৯৯-১৯৭৮)] বাড়ি যাচ্ছিলাম। শুনলাম হুমায়ূন কবির আর বুদ্ধদেব ‘চতুরঙ্গ’ নাম দিয়ে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্ৰকাশ করছেন। তারা স্থির করেছেন লেখকদের ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দক্ষিণা দেবেন। ৪
তবে প্রথম থেকেই হুমায়ুন কবিরই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। শ্যামলকৃষ্ণের ১১ মার্চের (১৯৩৮) দিনলিপি দেখা যাক। তিনি বর্ণনা করছেন ‘পরিচয়’ পত্রিকাকেন্দ্রিক আড্ডা, সেদিন যেটা বসেছিল সুধীন্দ্রনাথ দত্তের (১৯০১-১৯৬০) বাড়িতে :
একজন প্রশ্ন করলেন নতুন ত্রৈমাসিক ‘চতুরঙ্গ’ কবে নাগাদ আত্মপ্রকাশ করবে।
আর একজন জানতে চাইলেন, হুমায়ুন ও বুদ্ধদেবের মধ্যে মনের মিল কোথায় ? সুধীন্দ্র ঠাট্টা করে বললেন, চেহারাতে কিছু কিছু মিল আছে। তারপর তিনি জানালেন যে হুমায়ুন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। নতুন পত্রিকাতে মাসে কত টাকা ঢালতে পারবেন। জানতে চাইলে হুমায়ুন বলেন পাঁচশ টাকা। তিনি বলেন, পাঁচ হাজার টাকা জলে ফেলার সংকল্প না করে কোনো পত্রিকা প্ৰকাশ করা যায় না। হুমায়ুন বলেন, দুজন ধনী সন্তানকে ম্যানেজার বা সেই রকম কোনো পদ দিলে তারা মাসে দেড়শ টাকা করে চাঁদা দেবে, উপরন্তু উদয়াস্ত বিনা বেতনে খাটবে।
আমরা সকলে হেসে উঠতে সুধীন্দ্র বললেন, কবীর সিরিয়াসলি বলেছে। ৫
পত্রিকাটির শুধু আর্থিক দিক নয়, অন্যান্য সকল দিকই হুমায়ুন কবিরের ‘সিরিয়াসলি’ কাজের ফল। ‘চতুরঙ্গ’─এর ‘অকল্পনীয় লেখকসূচি’ তাঁরই প্রভাব-প্রচেষ্টার প্রাপ্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১–১৯৪১) কাছে গল্প চেয়ে তিনিই পত্ৰ পাঠান। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য ‘নারী’ নামে একটি কবিতা পাঠিয়েছেন হুমায়ূন বরাবর যা পত্রিকার উদ্বোধনী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ৬ ‘চতুরঙ্গ’─এর প্রধান রূপকার হিসেবে কবিরকে স্বীকৃতি দিয়ে এখনো স্মরণ করতে পারেন বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী সুলেখক প্রতিভা বসু (জ. ১৯১৫)। সম্প্রতি ড. আবুল আহসান চৌধুরীর কাছে এক সাক্ষাৎকারে বলেন :
হুমায়ুন কবির আর বুদ্ধদেব বসু মিলে একটা কাগজ বার করেছিলেন। হুমায়ুন কবিরই সমস্ত সব ব্যবস্থা করেছিলেন। উনি বলেছিলেন। আপনি আর আমি দু’জনেই এটি চালাব। সেটার নাম ‘চতুরঙ্গ’ ।
তবে পত্রিকার এইরূপ কর্মব্যবস্থাপনা ও তার সূত্রে কর্তৃত্ব নিয়ে দু সম্পাদকের মধ্যে যে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাবে অন্যত্র। বিষ্ণু দে ১৯৩৮ সালের ৩ অক্টোবর বুদ্ধদেব বসুকে এক পত্রে লেখেন ‘চতুরঙ্গ’ কবে বেরোবে ? বেরোবে তো ? ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ৮
জবাবে ১১ অক্টোবর বুদ্ধদেব লিখেছেন দার্জিলিং থেকে─
‘চতুরঙ্গ’ কি বেরিয়েছে ? আমি কবিরকে এক চিঠি লিখেছিলুম, কোনো জবাব নেই। এবারেও যদি কোনো গোলমাল হয়ে থাকে, ভবিষ্যতে আমি কবিরের হাতেই সমস্ত ভার অর্পণ করে বিদায় নেব। ‘চতুরঙ্গ’ শেষ
পর্যন্ত একটা লজ্জার ব্যাপারে না দাঁড়ায়। ‘চতুরঙ্গ’ সংক্রান্ত কোনো খবর কানে পৌছলে দয়া করে আমাকে জানাবেন কি ? ৯
এর পরের চিঠিতে (১৪/১০/১৯৩৮) বিষ্ণু দে লিখলেন─
‘চতুরঙ্গ’ বেরিয়েছে, গত সোমবার বাস থেকে স্টলে দেখলুম, মাস্টারির করুণ যাত্রায় নেবে দেখা হল না। পরিচয়-এর অমৃতবাবু ও আমার ভাই ভিতরটাও দেখেছেন, তাদের পছন্দসই। সুধীন বাবু বা আমি কাগজ পাইনি এখনও । আপনারা নাকি আবার প্রচার করছেন অর্থমূল্য দেবেন ? ১০
উল্লেখ্য প্রথম সংখ্যায় বিষ্ণু দের ছিল কবিতা (মুদ্রারাক্ষসী) আর সুধীন্দ্রনাথের ছিল প্ৰবন্ধ (প্ৰগতি ও পরিবর্তন)। উপরের পত্ৰখানা পৌঁছনোর পূর্বেই বুদ্ধদেব দার্জিলিঙের ঠিকানায় ‘চতুরঙ্গ’ পেয়ে যান। এই সংবাদসহ তিনি বিষ্ণু দে বরাবর যে প্রতিউত্তর (তারিখবিহীন) লিখলেন । তার একটু দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেয়া হল কারণ পত্রিকাটির কর্মব্যবস্থাপনার তথ্য ছাড়াও প্রথম সংখ্যার সংক্ষিপ্ত সমালোচনা এখানে লভ্য─
ইতিমধ্যে অর্থাৎ আপনার চিঠি পাবার আগেই রেলওয়ে পার্শেলযোগে ১০ কপি ‘চতুরঙ্গ’ পেয়েছি। বহিরাবয়ব সুন্দর, পঠিতব্য বস্তুও মন্দ নয়, তবে কোনো কোনো লেখা বিস্তর ছাপার ভুলে কণ্টকিত মনে হলো। আপনার কবিতাতেও মনে হয় একটা অবাঞ্ছিত দাঁড়ি পড়ে গেছে। কী করে হলো জানিনে, আমি নিজে প্রুফ দেখেছিলাম। আপনারা কেউ কাগজ পাননি শুনে অবাক হলাম। আমি অন্যতম কর্মসচিবকে একটি সম্পূর্ণ লিস্টি দিয়ে এসেছিলাম; তারপর এখান থেকে কবিরের প্রতিনিধিকে সেই তালিকা (ঠিকানাসুদ্ধ)। আবার পাঠিয়েছি। কবির বোধহয় কলকাতায় নেই। এতদিন আপনারা সকলেই কাগজ পেয়েছেন আশাকরি─ পেয়েছেন তো ? চতুরঙ্গের মুস্কিল এই যে ব্যবস্থাভার বহুধা বিচ্ছিন্ন; ফিরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত করবার চেষ্টা করবো। এবারে কাগজ পাওয়ার দেরি ইত্যাদি ক্রটি আপনারা মার্জনা করবেন। চতুরঙ্গে কবিরের আবিষ্কার আবুল মনসুরের গল্পটি সত্যি উল্লেখযোগ্য রকম ভালো, সে তুলনায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পটি একেবারেই ফাঁকি। ১১
পত্রের আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) আর গল্পটি হচ্ছে ‘নেহাত গল্প নয়’ । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯১০-১৯৫৬) গল্পের নাম ‘বোমা’ ! তবে বুদ্ধদেবের ‘ব্যবস্থাভার’ ‘কেন্দ্রীভূত করবার চেষ্টা’ সম্ভবত সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত ‘কবিরের হাতেই সমস্ত ভার অর্পণ করে বিদায়’ নেন। তবে লেখক হিসেবে বুদ্ধদেবকে আমরা ঠিকই পাই। দু'জনের সম্পর্কে যে কোনোরূপ চিড় ধরেনি এবং বুদ্ধদেব বসু, হুমায়ুন কবির সম্পর্কে কিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন তা তার ‘আমার যৌবন’ স্মৃতিকথার পাতায় পাওয়া যাবে। নিম্নের ‘চতুরঙ্গ’ প্রসঙ্গসহ একটু দেখা যাক─
পরিচয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী পত্রিকা তার ‘চতুরঙ্গ’ যখন বের করলেন, তখন আমি রইলাম তার সহকর্মী, প্রথম বছরে তাঁর সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদক, তারপর বহুকাল ধরে লেখক হিসেবে সম্পৃক্ত। উত্তরকালে, স্বাধীন ভারতে, তিনি যখন দিল্লির দপ্তরে তুঙ্গ স্থানে অধিষ্ঠিত, তখনও তাকে দেখেছি সাহিত্যের প্রতি আসক্ত ও বাংলা ভাষায় চর্চাপরায়ণ এবং সারা দিল্লি-কলকাতার সরকারি মহলে বাঙালি সাহিত্যিকের দরদী বন্ধু যে তাঁর মতো আর কেউ ছিলেন না, এ কথাও আমি প্ৰত্যক্ষভাবে জেনেছিলাম─অন্যদের উদাহরণ থেকেও, আমার নিজের জীবনেও। ১২
আবার শ্যামল কৃষ্ণের দিনলিপিতে চোখ দেই─
কামাক্ষী [কামাক্ষীপ্ৰসাদ চট্টোপাধ্যায় (১৯১৭-১৯৭৬] এসে খবর দিলেন বুদ্ধদেব চতুরঙ্গ পত্রিকার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন।
কবির বললেন তাঁর সময়াভাব কিন্তু বাধ্য হয়ে কাজের ভার নিতে হচ্ছে। তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন আপনাকে নিয়মিত গ্ৰন্থ সমালোচনা করতে হবে। ১৩
তো হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে ঐভাবে লেখা বা লেখক নির্বাচন ইত্যাদি মূল দায়িত্ব কবির নিজেই করতেন। তবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কবিরের ‘সময়াভাব’। যিনি শ্রম দিয়ে পূরণ করেছেন তিনি পরবর্তীকালের সম্পাদক আতাউর রহমান। পত্রিকাটি প্রকাশনার কয়েক বছর পর থেকে যে ঠিকানা─ ৫৪ গণেশচন্দ্র এভিনিউ, আতাউর রহমানের ফ্ল্যাট । অশোকমিত্ৰ─ যিনি পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকেই প্ৰায় নিয়মিত লেখক─সম্প্রতি ‘চতুরঙ্গ’ থেকে নামক মূল্যবান সংকলন সম্পাদনা করতে যেয়ে জানিয়েছেন─
গোড়া থেকেই ‘চতুরঙ্গে'র প্রধান আয়োজক তথা তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান। ... বছরগুলি যতই গড়ালো হুমায়ুন কবির রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত ব্যস্ততর ব্যস্ততম, সাহিত্যচর্চা তথা সম্পাদনার জন্য সরিয়ে রাখা সময় তাঁর ক্রমশ সংকুচিত। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তিনি কলকাতা থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিলেন। অন্তত প্ৰথম কয়েকবছর তিনি চতুরঙ্গের খানিকটা পরিচর্য করতেন, বিভিন্ন লেখকের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতেন, তার সুহৃদ তথা পরিচিতের পরিধি বিশাল, সেই ব্যপ্তির মধ্য থেকে পত্রিকার জন্য নতুন-নতুন লেখক ঠিকরে বেরিয়ে আসতেন। কিন্তু খুবই সংক্ষিপ্ত অধ্যায় সেটা। তারপর একটু-একটু করে ‘চতুরঙ্গ’ ক্রমশ আতাউর রহমানের সাহিত্যানুরাগ তথা প্রকাশনারুচির প্রমাণ উপস্থাপন করল। ১৪
‘চতুরঙ্গ’─এর ইতিহাসে আতাউর রহমানের অবস্থান অনিবার্য। তা শুধু পরবর্তীকালের সম্পাদনার সূত্রেই নয় প্রতিষ্ঠাপর্বের ভূমিকার জন্যও । কিন্তু তাই বলে তিনিই ‘প্রধান আয়োজক’ এরকম বক্তব্য সর্বসম্মত হবে না বোধ করি। কবির স্কুল জীবনে নওগাঁ কে. জি. স্কুলের ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন (১৯২১) অক্সফোর্ডে শিক্ষাকালে (১৯২৮-১৯৩২) একাধিক পত্রিকা (১৯৩২) নামে একটি উন্নতমানের ষাণ্মাষিক প্ৰকাশ করেন । এসবের মধ্য দিয়ে একটি কালজয়ী সাময়িকপত্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি গ্ৰহণ করেন। তাই-ই ‘চতুরঙ্গ’ । এই মানস-পুত্রের পুষ্টির জন্য ব্যক্তিগত প্রভাব দিয়ে লেখক-সংযোগ রক্ষা করেছেন, ‘সুহৃদ তথা পরিচিতের পরিধি’ থেকে ‘নতুন-নতুন লেখক ঠিকরে’ বের করে এনেছেন। সর্বোপরি ‘চতুরঙ্গ’ যে প্রতিষ্ঠান-প্রতিম হতে পেরেছিল তা কবিরের কারণে, কবিরের কালে । সুবৰ্ণজয়ন্তীতে পদার্পণের চেয়ে সেই প্রাপ্তির বর্ণিলতা কম নয়। তবে ওই সময়ের আতাউর রহমানকে আমরা অবশ্যই স্বীকৃতি চাই। আতাউর রহমান কর্মিষ্ঠ প্রচারবিমুখ পুরুষ ছিলেন। সমান্তরাল-সমীপ ‘সবুজপত্রে’র (১৯১৪) প্রসঙ্গ টানতে পারি। কর্ণধার প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬) পেশাগত ও অন্যান্য কাজে বিশেষ ব্যস্ত থাকতেন । তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতি বা সময়ের অসদ্ভাব যোগ্যতার সঙ্গে পূরণ করতেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৯৩– ১৯৭৪)। কিন্তু সাধারণত মূল কাজ-লেখা-লেখক নির্বাচন থেকে অর্থ, মুদ্রণ ইত্যাদি ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরবরাহ সমীক্ষা প্রমথ চৌধুরীই করতেন। পত্রিকাকেন্দ্ৰিক সবুজপত্ৰ গোষ্ঠীর মধ্যমণি তিনিই। তাই ‘সবুজপত্ৰ’ প্রমথ চৌধুরীর বা প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্ৰ’ । তেমনি হুমায়ুন কবিরের ‘চতুরঙ্গ’ ।
দর্শন শাস্ত্রে এমত বলা হয় যে, কোনো প্রতিতুলনাই সর্বাত্মকভাবে যথার্থ হতে পারে না। এক্ষেত্রেও হয়তো তাই। কবিরের মৃত্যুর (১৯৬৯) কিছুকাল পর থেকে আতাউর রহমান আমৃত্যু (১৯৭৭) চতুরঙ্গ সম্পাদনা করে পত্রিকাটির ইতিহাস বৃদ্ধি করেছেন। আরো ঐতিহ্য-ঋদ্ধ করেছেন। সময়ের বিচারে তিনিই অধিককাল অধিগ্ৰহণ করবেন। আতাউর রহমানের প্রকৃত কীর্তি-কীর্তিত হতে পারে ‘চতুরঙ্গ’─এর পূর্ণ ইতিহাস-আলোচনায়।
তথ্য-নির্দেশ :
১. অশোক মিত্ৰ (সম্পাদিত), ‘চতুরঙ্গ’ থেকে, কলিকাতা ১৯৯৬ সম্পাদকীয় নিবেদন।
২. সৈয়দ মুর্তজা আলী, ‘মুজতবা কথা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ ঢাকা ১৯৭৬ পৃ: ১২৮
৩. অন্নদাশঙ্কর রায়, ‘চক্রবাল’ কলকাতা ১৯৭৮, পৃ: ৪৮
৪. শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ ‘পরিচয়’-এর আড্ডা’ কলকাতা ১৯৯০ পৃ: ৬৮
৫. পূর্বোক্ত পৃ: ৬৯
৬. ভূঁইয়া ইকবাল ‘রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র’ ঢাকা ১৯৮৫ পৃ: ১১8
৭. প্রতিভা বসুর সাক্ষাৎকার─ড. আবুল আহসান চৌধুরী গৃহীত তারিখ ২৯ আগস্ট ১৯৯৫, (অপ্রকাশিত)।
৮. সাপ্তাহিক ‘দেশ’ কলিকাতা ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯
৯. পূর্বোক্ত
১০. পূর্বোক্ত
১১. পূর্বোক্ত
১২. বুদ্ধদেব বসুর রচনা সংগ্ৰহ─ ৪র্থ খণ্ড কলিকাতা ১৩৮৪ (বাং)। পৃ: ৪৬৩
১৩. শ্যামল কৃষ্ণ ঘোষ, পূর্বোক্ত পৃ: ২২১
১৪. অশোক মিত্র, পূর্বোক্ত ।