হুমায়ুন আজাদের "ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না" নিয়ে লিখেছেন পারভীন সুলতানা
কীর্তিমান লেখক হুমায়ুন আজাদের "ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না " এক অসাধারণ সুরেলা কিশোর গ্রন্থ। বইটি পড়ার পর ফুলের আকুল গন্ধে সত্যি সত্যি ঘুম ভেঙে চোখের পাতা জেগে ওঠে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
কীর্তিমান লেখক হুমায়ুন আজাদের "ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না " এক অসাধারণ সুরেলা কিশোর গ্রন্থ। বইটি পড়ার পর ফুলের আকুল গন্ধে সত্যি সত্যি ঘুম ভেঙে চোখের পাতা জেগে ওঠে; পুষ্প সুরভির কী মোহ মায়া! আহা! ফুলের সুবাসে কলকল জেগে ওঠে বুকের গভীরে ঘুৃমিয়ে থাকা শৈশব, প্রিয়তম কিশোর বেলা। পাঠকের সুগভীর বোধ হীরের মতো দ্যূতিময় হয়ে ওঠে হুমায়ুন আজাদ এর লেখা "ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না" গ্রন্থটি পাঠ করার পর। এ এক মনোময় কিশোর আলাপন! অসাধারণ মন উসকানো কথার গান! বইটা পড়ার পর শৈশব কৈশোরের সোনালী দিনগুলো এসে হাজির হবে স্মৃতির দরজা -জানালা টপকে একেবারে হৃদ অলিন্দে; বিমোহিত মন আর চোখ বলবে আহা! আহাগো! কী সুন্দর! কী অপরূপ গ্রামে কাটানো ছেলে বেলা! শৈশবের স্মৃতিপাঠ শেষে হৃদয় ছুট লাগাতে চাইবে ধ্রুবতারার মতো রঙিন মাছরাঙা দেখতে, গ্রামের সবুজ,নীল,ধুসর মেঘমালার জন্য। শুধু কী তাই! মন আকুলি বিকুলি করবে আশ্বিনের শাদা মাখন জ্যোৎস্নায় স্নান করতে, ওশমাখা হাওয়ায় ধান সবুজ ঘাস, হলদে কুমড়ো ফুলের দুলুনি দেখতে। "আমাকেও নিয়ে চলো রূপকথার চেয়েও আলোকিত রূপজ সেই শ্যামল গ্রামের ললিত শৈশবে"। বইটা পড়ে আমি কতবার এই কাতর স্বগতোক্তি করেছি! কত বার প্রাণের আবেগে আহা! আহা! মুগ্ধতায় নত হয়ছি! "ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না " অপূর্ব গীতল বৃষ্টি ধারার মতো ঝরে পড়া বর্ণমালার সুর। বইটা সব বয়সীর মধ্যে গ্রামীন জীবনের জন্য আপন টান আর ভালোবাসা তৈরি করবে এ কথা তিন সত্যি করে বলা যায়।
১৯৮৫ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আজাদের লেখা "ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না" শিশু কিশোর সাহিত্য নির্ভর গ্রন্থটি। তবে এ বইটিতে এমন এক গীতল মোহ আছে ;যে কোন বয়সীরাই বইটা পড়ার পরও বইটা বুকে জড়িয়ে রাখবে। পাঠমুগ্ধ ঠোঁট বিড় বিড় করবে এক নীলকণ্ঠ পাখি রং দু:খে - " রাড়িখাল। রাড়িখাল। আমি কত ডাক পারি তুমি ক্যান হুমইর দেও না? "
লেখকের প্রিয়তম গ্রাম " রাড়িখাল" এর যে রূপজ বর্ণনা আছে এক কথায় তা অসাধারণ!
এটি হুমায়ুন আজাদের শৈশব স্মৃতির এক হীরে খণ্ড। ১৭ টি শিরোনামে লেখক তার প্রিয় গ্রাম রাড়িখালে কাটানো অপরূপ সোনালি দিনগুলোর
ললিত স্মৃতিচারণ করেছেন।
তাঁর বড় মেয়ে 'মৌলি'কে উদ্দেশ্য করে লেখার প্রদীপ জ্বাললেও মূলত এ কথাগুলো শহুরে শিশুকিশোরদের উদ্দেশ্যেও বলা। যে শিশুরা গ্রামকে দেখে টেলিভিশনের পর্দায়, ছবির বইয়ে,(এখন ফেইস বুকে,ইউটিউবে) ট্রেনের জানালা থেকে। তারা গাঁ চেনে না, বুঝে না গ্রামের মায়াবী আদর সোহাগ, নেয়নি গ্রামের মখমলের মতো সবুজ ঘাসের মাঠে শুয়ে থাকার নিবিড় স্নেহ স্পর্শ। এ লেখা তাদের গ্রামে যেতে প্রাণিত করবে। বইটি পড়লেই বোঝা যায় গ্রাম আর শহরের মাঝখানে আকাশ আকাশ ব্যবধান। কী উদারতায়, কী সবুজে, কী মানুষের মমতার জড়াজড়িতে।
ফুলের গন্ধ: মূলত এ অংশেই গ্রামীন রূপ অতুল হয়ে ফুটে ওঠেছে। রাড়িখাল গাঁয়ে শাপলা ফোটে, রাতে চাঁদ ওঠে সাদা বেলুনের মতো। মাঠের ধানী সবুজ ঘাসে হলদে কুমড়ো ফুল শুয়ে থাকে। আর লুটোপুটি খায় চরাচর জুড়ে আশ্বিনের শাদা মাখন জোস্না। এখানে পুকুরের নুয়ে থাকা আকাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধ্রুবতারার মতো মাছরাঙা। একটি নড়বড়ে সাঁকোতে দাঁড়িয়ে কালো জল দেখাও কত শান্তির! শিশির আর কুয়াশায় মাখামাখি কচুরির ফুল, কী অপরূপ! পুকুর পাড় ম ম করে গোরা লেবুর গন্ধে। পাড়ে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে। সেই কবিতাটার মতো-
"পুকুর পাড়ে নেবুর তলে
থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না..."। মূলত লেখক তাঁর বইটির নাম করণ করেছেন কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচীর 'কাজলা দিদি'কবিতার লাইন থেকেই।
একখানেই শেষ নয় ;সবে শুরু।
লেখকের কাছে পৃথিবীর সেরা দৃশ্য হলো পুকুরে সাদা সরপুঁটির লাফ!
শীতেমায়ের হাতে তৈরি হয় শীতের পিঠে। মাটির চুলোতে জ্বলতে থাকা আগুনের
অপরূপ লাল যেন লাখ লাখ লাল গোলাপ! মাঠের পর মাঠে হলদে সরষে ফুলের দিগন্তের সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য দেখলে মনে হয় একটা হলুদ মহাসাগর! কী হৃদহরা বর্ণনা!
পুকুরে প্রদীপ জ্বলে : রাড়িখালের পুকুর সারাক্ষণ জলের নুপুর বাজায়। সেখানে জ্বলে হলুদ বেগুনি পাপড়ির ঝাড়বাতি। লেখকের কাছে কচুরি ফুল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর আলোকিত ফুল। এ ঝাড়লণ্ঠন আলোকিত করে পুকুরের চারপাশ।
বাড়ির কাছে আড়িয়ল বিল।তার উঁচু ভিটায় শীতে বোনা হয় নানান রবি শস্য। লাউ,কুমড়া, টমেটো, মরিচ...। আর লাউডগা ভিটে পেরিয়ে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে যায় দিগন্ত। চঞ্চল সুদূরপিয়াসী স্বপ্নে বিভোর যেন সে। কী মনোময় ভাষার কারুকাজ!
খেজুর ডালে সাদা বেলুন : মেলা থেকে কেনা বেলুনগুলো ; লাল, নীল, হলদে, সবুজ,সাদা। প্রিয় বেলুনগুলো একটা একটা করে হাতছাড়া হয়ে গেলেও সন্ধ্যা তবু মধুময় থাকে। পৌষ মাসে কড়াইয়ে জ্বাল দেয়া হয় খেজুরের রস। এক সময় ছোট ছেলেটার চোখ আবিষ্কার করে তার হারিয়ে যাওয়া সাদা বেলুন আটকে আছে খেজুরের ডালে।সাদা বেলুন এর সাথে সাথে কিশোরের চোখে মুগ্ধ হয়ে ধরা দেয় আকাশের গোল চাঁদ। তার নবীন দৃষ্টিতে চন্দ্র নানা ঢঙে রূপময়। কখনও সে চাঁদ রসে ভেজানো পিঠার মতো কখনও আয়নার ফুলের মতো সুন্দর।
দুই ভাই: এ পর্বে ফুল পাখি নয়, বলা হয়েছে নিতান্তই সহজ সরল মানুষের গল্প। দু'ভাই এর কথা। যাদের সারল্য তাঁকে আকৃষ্ট করেছিলো। আসলে লেখক এখানে সাদা মনের মানুষের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। সম্পদ বা চাটুকারিতায় মানুষ কখনও সত্যিকারের মানুষ হয় না। অন্যকে জয় করতে লাগে "মনা" আর "বারেক" এর মতো সহজ সরল সাদা অন্তরের মানুষ ।
যে দিন পুকুরে মানুষ নামে : শিরোনাম দেখেই বুঝা যায় এটি পুকুরে মাছ ধরার বর্ণনা। কত রকম মাছ আর মাছ ধরার সামগ্রী! খইল্লামাছ,রুই মাছ,বোয়াল,সরপুঁটি,আইর,নলা,শিং,মাগুর,টেংরা, বাইন,শোল,গজার। আর এসব মাছ ধরার জন্য কত্ত আয়োজন!জাল লাগে, পলো লাগে,টেঁটা লাগে, পেনি লাগে। মৎস মারা উৎসবে মাথার ওপর চঞ্চল হয়ে ওড়ে চিল। মাছ ধরা শেষে টলটলে পুককুরটাকে বিষন্ন আর ঘোলা লাগে। নুপুরের মতো ঝুমঝুম শব্দকরা পুকুরটা যেন অভিমানে নিথর হয়ে যায়;জল কলকল শব্দ করেনা। লেখকের কাছে শহরকে অনেক সময় ঘোলা পুকুরের মতো প্রাণহীন মনে হয়।
টিনের চালে বৃষ্টি : এ শহরে লেখকের শ্রান্ত চোখের পাতায় ঘুম আসে না। মা নেই, নেই তাঁর ছড়া কাটা। কী করে ঘুম আসবে! তখন কল্পনার টিনের চালে বৃষ্টি নামান তিনি। সেই শৈশবের ফেলে আসা রাতগুলোর মতো। পৃথিবীর সব চেয়ে মধুর মূর্ছনা আর ঐকতান বেজে চলে কল্পনা আরোপিত বৃষ্টিতে। গ্রাম মানে ঘুম আর শহর ঘুম না আসা অসহ্য প্রলম্বিত রাত্রি।
খেজুর পাতার ঘোড়া : শৈশব মানেই তো খালি খেলা আর খেলা। এখন শহরের শিশুদের কত রকম খেলনা! সে-সময় গাঁয়ে খেলার সাথী ছিলো অনেক কিন্তু খেলার জিনিস পাওয়া সহজ ছিল না।তাতে কী! খেলার আনন্দে বাধা পড়তো না। বাড়িতে বানানো খেলনাতেই রঙিন হয়ে উঠতো শৈশব। হাতে বানানো পুতুল, পাতার বাঁশি ছিলো খেলার সামগ্রী। তবে খেজুর পাতার ডাল দিয়ে বানানো দুলদুল ঘোড়ায় চড়ে কিশোর রাজপুত্র দিব্যি পাড়ি দিতো সাত সমুদ্র তের নদী! শুধু কী খেজুর গাছের ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ! গড়িয়ে নামা খেজুর রসও মধুময় করেছে শৈশবকে।
মধুর মতো ভাত: গ্রাম যে সবার জন্য ধন ও ধান্যের নিশ্চিত আয়োজন করে রাখতো তা-ও নয়। গ্রামেও অভাব আছে। যারা রোজ পেট ভরে খাবার পায়; যাদের অভাব নেই তারা ভাতের স্বাদটা বোঝে না। ভাতের আসল স্বাদ বোঝে রাড়িখালের তিন বেলা ভাত খেতে না পারা মতলব। ক্ষুধা কাতর মতলা একমুঠ ভাতের জন্য মুখিয়ে থাকতো। তার কাছে মনে হতো ভাত মধুর মতো, আর পৃথিবীতে সবচে সুন্দর গন্ধ হলো ভাতের গন্ধ। কী সরল উপমায় লেখক ভাতের অপরিহার্যতা বুঝিয়েছেন!
পদ্মার রূপোলী শস্য : মাছের রাজা ইলিশ তা কে না জানে! সব বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ। কিন্তু ইলিশ ধরার বিমল আনন্দঘন অভিজ্ঞতা আছে ক'জনের!
ইলিশ ধরার সূক্ষাতিসূক্ষ বর্ণনায় নিপুন মুন্সিয়ানা ফুটে ওঠেছে। মাঝ পদ্মায় কুবের ও গনেশের ( মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস "পদ্মা নদীর মাঝি ") ইলিশ মাছ ধরার চেয়েও বাদশাদা ও কিশোরের ইলিশ শিকারের বর্ণনা আরো নিপুন, আরো ডিটেইল। ইলিশের স্বাদ কেন এতো বেশি তার একটা চমৎকার মিথও আছে এখানে।
বিলের ধারে প্যারিস শহর : কিশোর চোখে থাকে দেখার অপার বিস্ময়। প্রতিটি নতুন সৌন্দর্য তার কাছে মহান হয়ে ওঠে। এ জন্য এক ঝাঁক নবীন কিশোরের চোখে " যদুবাবু"র বিশাল সুন্দর দালান বাড়িটাকে মনে হলো এটাই প্যারিস শহর। এখানেই ওরা প্রথম গোলাপ ফুল দেখলো,দেখলো পুকুরের রঙিন মাছ,পেতলের বিরাট ঘন্টা, বিশাল বৃক্ষ। এতো সুন্দর শহরের মতো বাড়িটাকে তারা প্যারিস শহর ভাবল। আহা শৈশব কৈশোরেরর দৃষ্টি কী মধুর ঘোরমাখা স্বপ্নের কাজলে আঁকা!
দুপুরের দীর্ঘশ্বাস : ছোট ছোট হৃদয় খুব সহজে বড় দু:খকে ছুঁয়ে ফেলে। তাইতো ভাগ্যকূলে যাওয়া- আসার পথে নন্দলাল বাবুর জলধিকুটিরের দেয়ালে খোদাই করা একটি শোকের কবিতা বেদনাবিধুর করে তুলতো কিশোরের বুক। যে শোক বার্তায় ছিল জলধি নামের এক অপরূপ তরুনের অকাল মৃত্যুর কথা। ছোট বুক অদেখা সেই তরুনের জন্য টলমল করতো।
মেলা মেলা মেলা :
মেলা মানেই বাঁশি বেজে ওঠা। মেলা মানে উৎসব আর বেশুমার আনন্দে দেবে যাওয়া। মেলা মানে হাওয়াই মিঠাই, চড়কি চড়া, সার্কাস, যাদু দেখা, যাত্রা দেখা। সব বিমল আনন্দের জড়াজড়ি হলো মেলা। মেলায় খেলা দেখে, যাদু দেখে, সার্কাস আর যাত্রা দেখে দু হাতে আনন্দ কুঁড়িয়ে নেয়া যায় খুশিমতো। মেলা থেকে হরেক আনন্দ কুঁড়িয়ে বাড়ি ফেরত কিশোর কল্পনায় কখনও হয়ে ওঠে ত্রি-ফলা খেলোয়াড়, কখনও তরুণ যুবরাজ, কখনও বা যাদুকর।
সুখ আর শোকের কবিতা : কিশোর হৃদয় কুসুম কোমল। কবিতার নীল বেদনায় শিশু মন কেঁদে উঠতো। "কাজলা দিদি " আর "ছিন্ন মুকুল" কবিতা দুটো আমরণ তাঁর বুকে কষ্ট জলের দাগ হয়ে থাকে।
ওই বাড়িটা কার?
নানা গাছগাছালি ভরা বাড়িটা কার শিশু মন তা জানতে উৎসুক। বাবাকে জিগেশ করে জানা যায় এ বাড়িতে জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু জন্মেছিলেন। রাড়িখালের এ বৃক্ষ শোভিত বাড়িতে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন বলে চিরকাল গর্ব করবে রাড়িখালের মানুষ।
সবচেয়ে যে ছোট পিঁড়িখানি : দু:খে বুক ফালি ফালি হয়ে যায় সব চেয়ে ছোট পিঁড়িটায় বসতো যে শিশু তার জন্য। কেন! কেনগো? কারন ছোট পিড়িতে বসার ছোট মানুষটা যে এখন সুদূর আসমানের তারা হয়ে গেছে!
গ্রামে তখন কলেরার মহামারি লাগলে কোন চিকিৎসা ছিল না। কলেরা না বলে লোকজন বলতো ওলাওঠা বিবি আসছে। গ্রামকে গ্রাম কলেরায় উজাড় হয়ে যেতো। কিশোরের ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ মাত্র তিন বছর বয়সে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। ভাই হারানোর কষ্টে হৃদয় শূন্য হয়ে যায়। চোখের তারা করে রাখে ভাই ভাইকে।
গ্রামের মৃত্যু :
এরপর আরও মৃত্যু। গ্রাম মরে যেতে থাকে। মরে যেতে থাকে প্রিয় রাড়িখাল।চাঁদের মতো রূপসী গ্রামের চোখ বসে যায়। গোলগাল তাজা গাঁ নেতিয়ে পড়ে। উঁচু করা হয় সড়ক । কিন্তু এ উচ্চতা টপকে বর্ষাতেও পদ্মার নয়া পানি ঢুকতে পারেনা গ্রামে।পদ্মার পলি পায় না গ্রামের জমি। খাল শুকিয়ে যায়। ধীরে ধীরে গ্রাম মরতে থাকে। ধ্রুবতারার মতো মাছরাঙা ঝাপিয়ে পড়ে না পুকুরে। ঝাঁকবেধে পুকুরে আসে না রঙিন পুঁটি মাছের দল। গরু ঘাস পায়না।দুধ নাই, শবরী কলা নাই। গ্রাম মরে যাচ্ছে। থাকে দু:খ, থাকে ক্ষোভ।
আমি ডাক পারি :
রাড়িখালকে ডাকলেও সে আর উত্তর দেয় না। প্রানের সব ভালোবাসা উপুর করে আকুল গলায় লেখক রাড়িখালের কাছে জানতে চান, "বউন্নাফুলে শাদা অয় ফাগুন আর চৈত মাস? ইজলের রাঙা ফুল ভাইসসা যায় ম্যাগের পানিতে? আমি কত ডাক পারি।তুমি ক্যান হুমইর দেও না? আহাগো কী আকুতি!
স্মৃতি উসকে দেয়া এ বই আবেগাপ্লুত করে পাঠককে। স্মৃতিভেজা ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না।
শিশুমনে গ্রামকে ভালোবাসার বীজমন্ত্র এই বই। শিশু-কিশোররা গ্রামকে শুধু বইয়ের ছবি হিসেবে দেখবে না। গ্রামের হৃদপিন্ডে যাবে, ঘাসের নরম মখমলে শুয়ে গড়াগড়ি দেবে, ধ্রুবতারার মতো রঙিন মাছরাঙার উড়াল দেখে আসবে। গাঁ এর উদার বিস্তৃত আসমানে নানা রকম চাঁদ ওঠা দেখে আসবে। হৃদয়ের গভীর অতলে লিখে রাখবে নিজের নিজের প্রিয় গ্রামের নামটি।