২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার জয়ী হলেন ইয়োন ফসসে
উপন্যাস, ছোটগল্প এবং পিন্টারেস্ক* নাটকের নরওয়েজিয় লেখককে বিচারকরা প্রশংসা করেছেন 'ভাষাহীনদের ভাষা দেওয়ার জন্য'।
নোবেল পুরস্কার (সাহিত্য) ৬৪ বছর বয়সী নরওয়েজিয় লেখক ইয়োন ফসসের পেয়েছেন "অভিনব নাটক ও গদ্য রচনার জন্য যা ভাষাহীনদের ভাষা দেয়"। তার রচনার মধ্যে রয়েছে উপন্যাস সিরিজ Septology, Aliss at the Fire, Melancholy এবং A Shining।
“বিভিন্ন ধরনের শৈলী জুড়ে তার বিশাল সাহিত্য সম্ভার রয়েছে, প্রায় ৪০টি নাটক এবং অনেক উপন্যাস, কবিতা সংকলন, প্রবন্ধ, শিশু-সাহিত্য ও অনুবাদ রয়েছে," বলেছেন নোবেল কমিটির সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স অলসন। "ফসসে তার নরওয়েজিয় পৃষ্ঠভূমি ও ভাষার উৎপত্তিস্থলে উদ্ভাসিত হয়েও আধুনিকতাবাদের শিল্প পদ্ধতিগুলিও ব্যবহার করেছেন।"
ফসসের কথাসাহিত্য প্রকাশক জ্যাক টেস্টার্ড এই খবর শুনে বলেন, "তিনি একজন অসাধারণ লেখক যিনি উপন্যাস লেখার একটি সম্পূর্ণ অনন্য পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন। তার নরওয়েজিয় সম্পাদক সেসিলি সাইনেস সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যদি ইয়োনের কোনও বই খুলে কয়েক লাইন পড়েন, তাহলে বুঝতে পারবেন এটি অন্য কারো লেখা হতে-ই পারে না।
"তার উপন্যাসগুলো মন্ত্রমুগ্ধকারী, রহস্যময় এবং তার বেড়ে উঠা পশ্চিম ফিয়র্ডগুলির পরিবেশে সৃষ্টি," টেস্টার্ড আরও বলেন। "এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি নিউ নরওয়েজিয়ান বা নিউনরস্ক-এ লেখেন, যা নরওয়েয়ে একটি সংখ্যালঘু ভাষা, এটি নিজেই একটি রাজনৈতিক কাজ। তিনি একজন অসাধারণ নাট্যকার ও কবি ও। তিনি একজন অসাধারণ মনঃশক্তির অধিকারী, তার চেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হতে পারে না।"
১৯৫৯ সালে নরওয়ের পশ্চিম উপকূলের হাউগেসুন্ড-এ জন্মগ্রহণ করে ফসসে স্ট্রান্ডেবার্ম-এ বেড়ে উঠেন। সাত বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় তিনি প্রায় মারা যান, যা তিনি তার শিশুপ্রাপ্তির "সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা" হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং যা তাকে একজন শিল্পী হিসেবে "গড়ে তোলে"। তার কিশোরবয়সে, তিনি একজন রক গিটারিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, যারপর তার আগ্রহ লেখালেখিতে নিয়ে গেল।
তার প্রথম উপন্যাস Raudt, svart ("লাল, কালো") ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। তার প্রথম নাটক Og aldri skal vi skiljast ("আর আমরা কখনও বিচ্ছিন্ন হব না") ১৯৯৪ সালে বার্গেনের জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ করা হয়। তবে, তিনি যে প্রথম নাটক লিখেছিলেন Nokon kjem til å komme ("কেউ আসতে যাচ্ছে"), ১৯৯৯ সালে ফ্রেঞ্চ পরিচালক ক্লড রেজি সেটি নান্টের-এ মঞ্চস্থ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
ফসসে ৩০টিরও বেশি নাটক লিখেছেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে Namnet ("নাম"), Vinter ("শীত"), এবং Ein sommars dag ("একটি গ্রীষ্মের দিন")। তার বৃহত্তর কাজের মধ্যে রয়েছে Septology ট্রিলজি, যার তৃতীয় খণ্ড ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের দাবিদার ছিল।
নাট্যলেখন থেকে একটি বিরতির পর ২০১৩ সালে ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণের পর ফসসে Septology শুরু করেন। এটি নরওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে একা বসবাসরত একজন বৃদ্ধ শিল্পী আসলের কথা বলে, যিনি তার জীবনকে ফিরে দেখচ্ছেন। সেখানে বিয়োর্গভিন-এ আরেকজন আসলে রয়েছেন, যিনি একজন শিল্পী, কিন্তু মদ্যপানের সমস্যায় ভুগছেন। এই দ্বিরূপ ব্যক্তিরা মৃত্যু, বিশ্বাস এবং ভালোবাসা সম্পর্কে একই চিরাচরিত প্রশ্নে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন।
১৯৮৯ সালে ফসসের Naustet ("বোট হাউস") উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার একই সালে, উনি হরডাল্যান্ডের রাইটিং একাডেমিতে অন্য একজন নরওয়েজিয় লেখক কার্ল ওভে ক্নাউসগার্ডকে শিক্ষা দেন, যিনি তখন একজন ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালে ক্নাউসগার্ড লিখেছিলেন, "ফসসে যাই লিখুন না কেন, সেখানে ভুল পাওয়া যাবে না, এবং কখনওই অনুপস্থিত তাও নয়।"
গার্ডিয়েন থেকে অনুবাদঃ রিটন খান
*সাহিত্য ও নাটকের চর্চায়, "পিন্টারেস্ক" শব্দটি হ্যারল্ড পিন্টারের নাটকের বিশিষ্ট শৈলী ও বিষয়গুলোকে উল্লেখ করে। পিন্টারেস্ক শৈলীর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য হল:
অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তা প্রতিফলিত করা
পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য রহস্যময় তথ্য উপস্থাপন
স্থিরপাত্রের মাধ্যমে পাঠকের সামনে সামাজিক চিহ্নিতকরণ উপস্থাপন
দুর্বোধ্য সংলাপ যা প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে রাখে
প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা ও অস্পষ্টতার মাধ্যমে চরিত্র উপস্থাপন