২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস এর কথা। নেট ব্রাউজ করতে করতে হঠাৎ চোখে পড়ে 'বইয়ের হাট' নামক গ্রুপটির। সঠিক সংখ্যা বলতে পারবো না। তবে মনে হয় ৩০০০+ যেকোন সংখ্যায় সদস্য হয়েছিলাম। কিন্তু তখন পর্যন্ত ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি, অসম্ভব সুন্দর এক আনন্দযজ্ঞের অংশীদার হতে যাচ্ছি আমি। সেই যাত্রার অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গর্বের সহিত বহন করে চলেছি আজও।
সেই প্রিয় 'বইয়ের হাট' প্রকাশনী থেকে এবার প্রকাশিত হতে যাচ্ছে 'পড়ুয়া'র প্রথম সংখ্যা। আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং উদ্বেলিত। প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই এর নামকরণ নিয়ে। আমরা ছোটবেলায় পড়তাম, অমুক তমুক গল্পের নামকরণের সার্থকতা নির্ণয় করো। তখন এতো কিছু গভীরভাবে চিন্তা করিনি। এখন বুঝি যেকোন কিছুর একটা সুন্দর নামের যথার্থতা কতটুকু। তাইতো কথায় আছে A beautiful name, or reputation, earns trust and respect and sometimes it is better than a lot of wealth. পড়ুয়ার প্রথম সংখ্যায় যারা লিখেছেন তাদের লেখায় মুন্সীয়ানার ছাপ যথেষ্ট লক্ষনীয়।
প্রথমেই প্রচ্ছদের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলবো, কথাসাহিত্যিক সাদিয়া সুলতানা নিজ কর্মের মাধ্যমেই তার মননশীল চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন এখানে। প্রচ্ছদে বইয়ের যে দুইটি শেলফ দেখা যায় সেগুলো একদিকে যেমন রামধনুর সাত রঙের হোলি খেলার কথা মনে করিয়ে দেয়, তেমনি মনে করিয়ে দেয় আমাদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের কথা। এই সৃজনশীলতায় মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের প্রেমময় অনুরণন সহজেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। প্রথম দর্শনেই তা মনের ভিতরে জায়গা করে নেয়। যে ভালোবাসা এবং নিবেদিতপ্রাণ নিয়ে প্রচ্ছদশিল্পী কাজটি করেছেন তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিদান দেয়া অসম্ভব এক ব্যাপার।
সম্পাদক হিসেবে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে তাদের সম্পর্কে কোন কিছু বলা আসলে আমার সাধ্যের বাইরে। আমাদের অত্যন্ত প্রিয় Nahar Trina দিদি এবং Riton Khan ভাইয়া, যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের বইয়ের হাটের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যাদের নিবেদিত প্রাণ বইয়ের হাটকে অনন্য আলোয় আলোকিত করে যাচ্ছে, আমরা তাঁদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।
নাহার তৃণার কলাম থেকে শুরু করে নায়লা নাজনীন এর মার্জিনের গল্প পর্যন্ত প্রত্যেকটি লেখাই সুপাঠ্য। এই লেখাগুলো থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পেরেছি। পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে প্রিন্ট হওয়ায় চোখের ও আরাম হয়েছে। পড়তে কষ্ট হয়নি। প্রতিটি পৃষ্ঠায় যত্নের স্পষ্ট ছাপ লক্ষ্যনীয়। বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতার সাথে রঙের মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার, ইমেজের স্বচ্ছতা 'পড়ুয়া'কে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে।
বইপড়ুয়াদের অনেক সুবিধা রয়েছে। বই হচ্ছে এমন এক সঙ্গী যে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না। প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে গেলেও বই তো অনন্ত যৌবনা, কবিই বলেছেন। বই পড়তে পড়তে প্রতিনিয়ত নিজেকে আবিষ্কার করা যায়, বিভিন্ন রুপ, রস আস্বাদন করা যায়। যারা কাজ করতে চায় না তাদের হাতে কোন কাজ থাকে না কিন্তু যারা কাজ করতে চায় তাদের কাজেরও অভাব হয় না। এই বই পড়ার কারণেই পারিবারিক মনস্তত্ত্বের শিকড়ে যেতে পেরেছি আমি। কেউ যদি একটি ভালো উপন্যাস পড়ে, তাহলে সেখান থেকেই সে জীবন চলার পাথেয়কে খুঁজে নিতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি। অনেক জটিল তত্ত্বের সমাধান হয় যে জ্ঞানচক্ষুর মাধ্যমে সেই চক্ষুর সন্ধান পাওয়া যায় এই বই পড়েই। তবে শুধু পড়ুয়া হলেই চলবে না। পড়ার পর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত করতে হবে গোটা সমাজকে, মানব জাতিকে। তবেই না পড়ার সার্থকতা।
৬৫ পৃষ্ঠার প্রথম প্রকাশনায় যারা লিখেছেন তাদের প্রতি শুভকামনা রইলো। নিশ্চিত হয়েই বলছি 'পড়ুয়া' এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক মঞ্চে আবির্ভূত হবেন যাদের সৃজনশীলতায় বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে, সাথে সাথে আমরা যারা পাঠক তারাও হবো ঋদ্ধ।
বইবিমুখ একটা প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি পুনরায় মনোনিবেশ করানোতে 'বইয়ের হাট' এর ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করছি। এই হাট আমাদের সকলের। এই হাটে আমরা জ্ঞানের সওদা করবো, এই হাট থেকে আহরিত জ্ঞানসম্পদ দিয়ে আমরা সমগ্র বসুন্ধরা আলোকিত করবো।
সবশেষে 'পড়ুয়া'র জন্য রইলো অনিঃশেষ শুভকামনা। 'পড়ুয়া'র উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।