পুরস্কারে পাওয়া বই
সুমন বিশ্বাস লিখছেন...আর ছিল পুরস্কার হিসাবে বই দেওয়ার প্রচলন। সেই রীতি কি এখনও প্রচলিত আছে? পুরস্কার হিসাবে বই কি এখনও কৃতী ছাত্রদের দেওয়া হয়? দিলেও, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই ছাড়া আর কোন বই
সদ্য Mikhail Sholokhov-এর লেখা Virgin Soil Upturned পড়া শেষ করলাম। এমন একটা বই পড়লে যা হয় - লেখকের অন্য বইও পড়তে ইচ্ছা করছে, কিন্তু বাড়িতে And Quiet Flows the Don ছাড়া আর কোন বই নেই - সে বই এতটাই মনে দাগ কাটা, এখন ধরে লাভ নেই। তাই আপাতত তাঁর অন্য লেখা পড়ার সুযোগ নেই। অভাবে বাড়ির রাশিয়ান বইগুলি আগে যা পড়েছি সেগুলি আবার করে পড়ার আগ্রহে পুরনো বই ঘাঁটতে শুরু করলাম। গোর্কির Mother পড়েছি সেও অনেকদিন হল, আর একবার পড়লে কেমন হয়? সেটাই খুঁজে বার করি তাহলে।
বেশীক্ষণ খুঁজতে হল না - পেয়ে গেলাম। পাতা উল্টাতে গিয়ে মনে হল প্রায় পঁচিশ বছর আগে পড়লেও বইটির অনেক কিছুই মনে আছে। ছবিগুলিও ভীষণ ভাল লেগেছিল - দেখছি সেগুলিও ভুলি নি। তাতেও আবার পড়লে ক্ষতি নেই।
পড়া শুরু করার আগে অন্য আর একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম।
আপনিও পড়ুয়া'য় লিখুন। আমাদের কাছে লেখা পাঠাবার ঠিকানা editor@porua.net
বইটির শুরুতে একটা পুরস্কারপ্রাপ্তির বার্তা - ১৯৫৫ সালে জনৈক ছাত্র নবম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার জন্য এই বইটি পুরস্কার হিসাবে পাচ্ছে। যে স্কুলের নাম সেই বার্তায় লেখা হয়েছে, সেই স্কুলটি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে প্রায় ১১০ কিমি দূরের একটি গ্রামের। ভারত-পূর্বপাকিস্তানের সীমান্তে শেষ স্টেশন, বানপুর স্টেশনের কাছে(গেদে স্টেশন পরে হয়েছে)। জানি না এখনও স্কুলটি আছে কিনা। খোঁজ নিলেই অবশ্য জেনে যাব।
এই বইয়ের পাশেই ওই আলমারিতে আর একটি বই দাঁড়িয়ে ছিল। সেই বইটিও নামিয়ে নিলাম - যাত্রী, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। এটিও পড়েছি সেই ছাত্রজীবনের শেষের দিকে, আর একবার পড়া প্রয়োজন। এই বইটিও পুরস্কার হিসাবে বাড়িতে এসেছিল - ভুলে গিয়েছিলাম কবে পাওয়া, খুললাম, ১৯৮৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্টে প্রথম হওয়ার জন্যে জনৈক ছাত্রকে বইটি পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয়েছে। এই স্কুলটিও কলকাতার নয়, হাওড়ার।
হঠাৎ এই সব উল্লেখ করে একটা পোস্ট লিখছি কেন? বলছি।
আমরা নিয়মিত হাহুতাশ করি, মানুষের পড়ার অভ্যাস কমেছে। কথাটির মধ্যে সত্যতা আছে। আমাদের ছোটবেলায় শুধু বাড়িতে কেনা বই আমরা পড়তাম না, বন্ধুদের থেকে ধার করা বই, লাইব্রেরীর বই নিয়েও পড়তাম। সেসব অভ্যাস মানুষের চলে গেছে। তাছাড়া ছিল উপহার হিসাবে বই দেওয়ার রীতি, সেই বইগুলিও কাড়াকাড়ি করে আমরা পড়তাম। এখন সেই অভ্যাসও কি আর আছে? উঁহু, তেমন একটা নেই। উপহার হিসাবে বই খুব কমজনই দেন, দিলেও অধিকাংশ প্রাপক খুশী হন না।
আর ছিল পুরস্কার হিসাবে বই দেওয়ার প্রচলন। সেই রীতি কি এখনও প্রচলিত আছে? পুরস্কার হিসাবে বই কি এখনও কৃতী ছাত্রদের দেওয়া হয়? দিলেও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই ছাড়া আর কোন বই দেওয়া হয় কি? বা রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ কিছু বিখ্যাত লেখকের বইয়ের বাইরে, তুলনায় অপরিচিত কিন্তু ভাল বই - পোস্টে যেমন উদাহরণ এল(যেমন বহু বই বাড়িতে রয়েছে, উদাহরণ হিসাবে মাত্র দু'টিই হাজির করা গেল - আমার ধারণা আমাদের অনেকের বাড়িতেই এমন সব বই বর্তমান।), তেমন বই কি উপহার পায় ছাত্ররা? পেলে আদৌ উল্লসিত হয়? পড়ে? তার বাড়ির অন্যরা পড়ে বা পড়েন? রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, বঙ্কিমচন্দ্র, তাঁদের লেখা পড়া তো অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তাঁদের বাইরেও যে আরও সাহিত্যিক আছেন, যাঁদের লেখা ছাত্রদের পড়া প্রয়োজন, সেই বিবেচনাবোধ অতীতে একেবারে অখ্যাত দুই স্কুলের পুরস্কারক্রেতাদের ছিল, সেই ভাবনা কি এখনকার দিনেও বতর্মান? সঠিক জানা নেই। জানার আগ্রহ যথেষ্ট আছে।
এই সব বই পারিবারিক সম্পদ। হয়তো সেই বয়সেই সেই বই পড়া বা পড়ে সম্পূর্ণ বোঝা যায় না, কিন্তু ভবিষ্যতে? এই যেমন একটি বই পরিবারে আসার আটষট্টি বছর পরে, অন্যটি আসার পঁয়ত্রিশ বছর পরে আমি দ্বিতীয়বার ধরছি, পড়ছি - এমন পুরস্কারের মূল্য তাই অর্থমূল্যে বিচার করা সম্ভব নয়, তাই না? আজ যাদের বই পড়ার আগ্রহ নেই, তারা যে ভবিষ্যতে সেই বই পড়বে না, তার বাড়ির অন্যরা সেই বই পড়বে না - তা কি জোর দিয়ে বলা যায়? ছাত্ররা পুরস্কার হিসাবে বই পেলে আদৌ পড়বে না, তাই দিয়ে লাভ নেই - একথা চিন্তা করে কিছু টাকা বা একটা মেডেল পুরস্কার হিসাবে দেওয়ার থেকে এমন ধরণের বইই যদি দেওয়া যায় সাহিত্যচর্চা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার গুরুত্ব অনেক বেশী নয় কি?
এখানে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। বিষয়টির প্রতি তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই পোস্ট। কাউকে কটাক্ষ করার উদ্দেশ্য নিয়ে নয় - যা জানা নেই, শুধু তা জানার জন্যেই লিখলাম।
অত্যন্ত জরুরি আর সুন্দর লেখা। এটুকু জানি সরকারি স্কুলের শিক্ষক আমার এক বন্ধু কলেজ স্ট্রিট এ বই কিনতে যান পুরস্কারের জন্য। কী ধরনের বই কেনেন জেনে জানাব।